প্রকাশিত: Fri, Dec 9, 2022 10:24 PM
আপডেট: Wed, May 14, 2025 4:16 AM

বাঙালির অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস

সাইদুর রহমান: বাঙালিদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ডিসেম্বর মাস। এই মাস মানেই বাঙালির মুক্তি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পাকিস্তান হটানোর মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে শুভ জন্ম হয় বাংলাদেশের। দুর্ভাগ্যজনক হলো জন্মের পর থেকে নিজ দেশের শাসকগোষ্ঠীরা এদেশের মানুষের উপর শোষণ-নিপীড়ন চালিয়েছে। বারবার জনগণ তাদের সংবিধান প্রদত্ত ভোটের অধিকার হারিয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। মাত্র ৬টিতে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জনগণ পরিপূর্ণভাবে তাদের ভোট দিতে পারেননি। সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ। এরপর থেকে ভোটের অধিকার হরণ শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ বছর গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতন দিবস। আজ সেই ঐতিহাসিক দিনে তিনি অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে অবসান হয় ৯ বছরের স্বৈরশাসনের। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। 

১৯৪৭ সালে দখলদার বৃটিশ রাজশক্তি ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলে এই উপমহাদেশ বিভাজনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান এ দুটি দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা, এই রাজ্যগুলো নিয়ে গঠিত হয়। শাসকগোষ্ঠি পাকিস্তান ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই ২৪টি বছর কঠিন দমন নিপীড়ন চালায় বাঙালিদের উপর। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার ভিত্তিতে সৃষ্ট হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ সৃষ্টির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের প্রথমটি হলো বাংলাদেশ হবে জনগণের দেশ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত দেশ; অর্থাৎ গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত দেশ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত; অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক দেশ।

বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্র; কিন্তু বাস্তবে শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নিষ্পেষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি ও দুর্নীতির ক্রমবিকাশ এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচিত ও সমালোচিত। কর্তৃত্ববাদী ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শাসনের শৃঙ্খলমুক্তি ঘটেছে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে সংগ্রাম করেছিলো সেটিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বীরের বাংলাদেশ। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কার্যত তা বাস্তবায়ন অধরায় রয়ে গেছে। শুধু স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি হচ্ছে সবখানে। এই চেতনা বিক্রি করে কেউ নিজেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের এবং কাউকে বিপক্ষে বানিয়ে ফায়দা লুটে খাচ্ছে। জনগণের ভোট চুরি হয়ে গেলেও স্বাধীনতা বিক্রিকারীরা নিরবে নিভৃতে চুরির সহযোগীদের সহযোগিতা নিষ্ঠুর পরিহাসের সমতুল্য। অতএব বাঙালির মুক্তির মাস ডিসেম্বর। এই ডিসেম্বরেই বারবার মুক্ত হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের জাতি বাঙালির। পাকিস্তানি নির্যাতনের ২৪ বছর এবং স্বৈরাচার এরশাদের ৯ বছর অর্থাৎ ৩৩ বছরের শোষণ ও গ্লানি মুক্তির মাস ডিসেম্বর। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে